হারানো শব্দ
কলমে মোশারফ হোসাইন মন্ডল
স্রোতের বিপরীতে হাঁটা আমার অভ্যাস হয়তো l আজ সকালে সেই ছেলাবেলার পুরাতন রীতি অনুসারে পড়তে বসেছি l হাত এ চিমটি কেটে দেখলাম সত্যিই কি আমি ! পড়তে বসেছি ! এতো সকালে ! ব্যাথা পেয়েছি চিমটি হয়তো জোরেই কেটেছি উফফ ! হঠাৎ আলোটা নিভে গেলো l ঘর অন্ধকার হয়ে এলো l ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটার টক টক করে ঘোরা দৌড় এর শব্দ কানে সিঁদোচ্ছে l ল্যাপটপ টির স্ক্রিনটি বন্ধ হওয়ায় যেনো মনে হলো আমার দিকে তাকিয়ে ও ভেঙ্গাচ্ছে l আমি সঙ্গে সঙ্গে দিলুম স্যাটার টা নামিয়ে l যাক শান্তি l ও এখন কারেন্ট এই চলে, অনেক সুখ-দুঃখের সাথী l যেখানে যায় ওকেও বগল দাবা করে নিয়ে যায় l ভোগান্তি দেয় বটে তবে কাজ টা দেরিতে হলেও উৎরে দেয় l ব্যাস আর কি আমি গেলাম উল্টে বিছানাতে l লেপের বড়ো দিক অন্তর্ধার্ন রহস্য শেষ মেস খুঁজে গায়ে দিতে যাবো কি, দেখি হাকিম চেচাচ্ছে "মাছ নেবে গো মাছছছ- ছছ l" কোথা থেকে একটা শব্দ এলো "ট্রিংয়িং অনুঘ্রহ করে শুনবেন গাড়ি সংখ্যা 31182 ডাউন বর্ধমান হাওড়া লোকাল 3 নং প্লাটফর্ম এ আসছে " ভাবলাম আমি কোথায় আছি স্টেশন না স্বপ্ন দেখছি লেপ টা হাত এ নিয়ে ভেবে দেখলাম আমি তো গ্রাম এই আছি l জানালা দিয়ে শব্দ ভেসে এলো "টাটকা একদম তাজা তাজা খেজুর মিঠাই মুখে দিলেই মিলাই, কোই দাদা রা দিদিরা আসুন নিতে হবে না একটু খেয়েই দেখুন " l ভাবলাম এতো আহারের বাহারের সুর করে মাইক দিয়ে বিকিকিনি ! জানালা দিয়ে চোখ পাতলাম দেখলাম হ্যা আমি লোকটাকে চিনি l আগে ঘামের সময় সুর করে যব আর ছাতু বেচতো, নাম বোধ হয় হারুন মিদ্দা l এসব শব্দে আমরা বিরক্ত হই না ভালো লাগে l এসব খুঁজতে কত মানুষ শিকড় খোঁজে শেষমেষ l আমরা হেলায় হারাই আর কি l যেমনি হোক নিজের গ্রাম নিজের গ্রাম l দূরে থাকলে গ্রাম যে টানে ওটাকে টোপোফিলিয়া বলে বইতে পড়েছিলাম এককালে l সত্যিই টানে বৈকি l জানালা দিয়ে যে চড়ুই টা আসে আজও এসেছে l এই সব শুনছি, একটু বেলা বাড়লো আমি তখন বালিস এ মাথা দিয়েছি l কারেন্ট এলো ল্যাপটপ চালালাম l একটু পেপারটাই চোখ বোলালাম কেমন যেনো শব্দগুলো মলিন হয়ে মিলিয়ে গেলো l ঘড়ির কাঁটাটার শব্দটাও l হঠাৎ অনেকক্ষণ পড়ে ঘড়িতে আমাতে চোখাচোখি হতেই দেখলাম সাড়ে এগারোটা বাজে ll
©Mosharaf Hossain Mondal
#d