--একটা কানের দুল, এক কাপ চা, একটা একটা নুপুর, একটা গল্পের বই আর একটা গোলাপ।
--"হ্যাঁ রে! তুই জীবনে আজ ওবধি কখনো গোলাপ নিয়েছিস আমার থেকে!"
--"জীবনে আমি ভাবিনি তুই অবুঝ রয়ে যাবি, কিন্তু তুই আছিস তো এখনও।" বিনোদিনীর দিকে একটু কটু ভাবে তাকিয়ে তার পর এগিয়ে পড়ল তারা হাত ধরে কলকাতার ভিজে রাস্তায়।
হালকা হাওয়া, চকচকে রোদ আর গরম চা আবার ফিরিয়ে নিয়ে এল দুজনকে পুরোনো গল্পের বাজারে। এখন তাদের কাছে আছে ঝুড়ি ঝুড়ি গল্প। সেই গল্পের মাঝখান দিয়ে কেটে গেল অনেকটা সময়। বিনোদিনী কে নিয়ে গেল একটা মলে যেখানে ওর জন্য একটা সাড়ি কিনল। নীল রং বিনোদিনীর প্রিয়। বসন্তের দিকে তাকিয়ে হাসল আর কিছুক্ষণের পর বেড়িয়ে আসল সাড়ি পরে। বসন্ত ভাবল একটা সিটি মারবে কিন্তু বিনোদিনী চোখ বড় করে আগেই বারণ করে দেয়।
--"কি মাল লাগছে তোকে দেখতে!" বসন্তের কথা শুনে মাথায় টোকা মাড়ল বিনোদিনী।
--"ইশ! কি ভাষা এইসব, ছোটোলোক।"
--"সরি সরি। মানে সুন্দর লাগছে। একটু স্লিপ হয়ে গেছি।"
--"সেই! সব জানি তোমার স্লিপ হওয়া।" মুখ ভেংচি কেটে বিনোদিনী বেড়িয়ে গেল। বসন্ত সবকিছু কিনল গোলাপ ছাড়া। বিনোদিনী এটা লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছু বলল না। এত দিন ধরে ও নিজের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কে দেখা করার জন্য ডাকছিল কিন্তু সেই ছেলেটা এখন প্রিয় বন্ধু থেকে প্রিয় মানুষ হয়ে গেছে আর সমস্যা এটা কি বিনোদিনী এটা জেনেও নিজের বুকে অনেক কিছু চেপে রেখেছে এত বছর ধরে।
সমস্ত গল্পের পর দুজনে এসে বসল আহিরীটোলা ঘাটে। ব্যাগ গুলো রেখে বিনোদিনী একবার ঘড়ির দিকে তাকাল। এবার তো ফিরতে হবে। কে জানে পরে কবে দেখা হবে। যদি নাও হয়, কথাও তো সেরকম হবে না।
--"ওই! কোন গভীর চিন্তায় চলে গেলি?" মুখের সামনে তুরি মেরে বসন্ত টেনে আনল বিনোদিনী কে বাস্তবতায়।
--"না। কিছু না।"
--"ও আচ্ছা আচ্ছা! তবে রাস্তা পার হওয়ার সময় চোখের জল মুচ্ছিলিস কেন? সেটাও কি এমনি?" বিনোদিনী অবাক তো হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করেনি। নিজেকে চাপা রাখার চেষ্টায় খুব ভালো ভাবে সফল হতে পেরেছে।
--"ধুর! ওরকম কিছুই না।" বিনোদিনীর উত্তরে পর বসন্ত আর কিছু বলল না।
বিনোদিনীর মনে হল হয়তো একবার বসন্ত কে বলে দিক। অন্তত এই যুদ্ধ বন্ধ হবে ওর মনের মধ্যে। সে বলতে যাবে তখন বসন্তের কাছে একটা কল এল। মোবাইল স্ক্রিনে নাম দেখাচ্ছে "ঐশানি কলিং"।
©Ananta Dasgupta
Continue with Social Accounts
Facebook Googleor already have account Login Here